আমাদের শরীরের প্রায় ৮০% রোগ হয় পেটের থেকে। পেটের বিভিন্ন রোগের মধ্যে যেমন কলিক পেইন (শূলব্যাথা)গ্যাসটইটিস ,বদহজম আলসার ও কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি।এই সমস্ত পেটের রোগের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। এই কোষ্ঠকাঠিন্যে হলো অন্যান্য পেটের যৎযাবতীয় রোগের মূল কারণ। প্রতিদিন পেট পরিষ্কার হলে তাহলে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে।
মা ঠাকুরমা বলতেন--। ভুঁড়ি আর মুঁড়ি সকল রোগের গুড়ি।"—-অর্থাৎ আমাদের শরীরের প্রায় ৮০% রোগ হয় পেটের থেকে এবং ২০% রোগ হয় মাথা থেকে।
পেট ঠিক তো সবকিছু ঠিক। পেট হলো আমাদের পরিপাক যন্ত্রের কেন্দ্রস্থল। আমাদের পরিপাকক্রিয়ায় যখন ব্যঘাত ঘটে তখন আমাদের পেটের নানা রকমের সমস্যা দেখা দেয়।
এবার আসুন এই পরিপাক ক্রিয়া সম্বন্ধে কিছুটা জেনে নেওয়া যাক।
আমাদের পরিপাকক্রিয়া একটি জটিলতম প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াটি যত সহজ সরল মনে হয় ততটা সরল তো নয়ই বরং বলা যেতে পারে একটি খুবই জটিলতর প্রক্রিয়া। আপনার-আমার সুস্থাস্থ্য তো অনেকাংশেই এই সুস্থ ও শক্তিশালী পরিপাক ক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল। আপনি সকালে যে প্রাতরাশ করেছেন সেই খাদ্যবস্তুর মধ্যে রয়েছে শর্করা, ফ্যাট, প্রোটিন ,ভিটামিন ও মিনারেল এর প্রত্যেকটির কার্যকারিতা যেমন আলাদা ঠিক তেমনি পরিপাকের প্রণালী ও পরিপাক এর ফলে যে সারবস্তু বা উৎপন্ন হয় তা সম্পুর্ন ভাবে আলাদা।আপনার শরীরের ওজ,তেজ,শক্তি বা তাপশক্তি উৎপন্ন করে, শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কে পরিচালিত করে, শরীরকে সুস্থ রাখে, ও দৈনন্দিন কাজে বিশেষ রূপে সাহায্য করে। এই খাদ্য গুণ কে একটি সুন্দর ছড়ার মাধ্যমে প্রকাশ করা যেতে পারে—
মাংসে মাংস বৃদ্ধি
শাকে বৃদ্ধি মল ।
দুগ্ধে সৌন্দর্য বৃদ্ধি
ঘৃতে বৃদ্ধি বল ।।
আমাদের পৌষ্টিকতন্ত্র বা পরিপাকতন্ত্রের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো খাদ্যগ্রহণ ,খাদ্যের পরিপাক ,পাচিত খাদ্যের সারভাগ বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় কাজে সাহায্য করা, এবং অপাচ্য খাদ্যের বহিষ্করণ করা ইত্যাদি।
পৌষ্টিক নালীর বিভিন্ন অংশগুলি হলো—
# মুখগহ্বর-
# গ্রাসনালী—
#পাকস্থলী—
# ক্ষুদ্রান্ত্র—
# বৃহদান্ত্র--
# মলাশয়--
এছাড়া পরিপাক ক্রিয়ায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে যকৃৎ ও অগ্ন্যাশয়ের।, এই দুটি গ্ৰন্থী পরিপাক ক্রিয়ার বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।
এবার আসা যাক আপনার সমস্যার সমাধানে-
মধ্যাহ্ন এবং নৈশ আহারের পর খাবার পরিবপাক বা হজম হতে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু আপনি আহার করার অনতিকাল পর মলত্যাগের কারণ আপনার পরিপাক ক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক কি কারনে পরিপাক ক্রিয়া বাধা সৃষ্টি হয় বা ব্যাহত হয়।
প্রথমতঃ পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন। ফাইবার যুক্ত খাবার বা খাবারের সঙ্গে সব সময় সালাড ফল-মূল খান।
দ্বিতীয়তঃ অগ্নাশয় বা যকৃতের নিষ্ক্রিয়তা—
তৃতীয়তঃ খাবার সঙ্গে সঙ্গে জলপান ,দৌড়ঝাঁপ করা খেলাধুলা করা ইত্যাদি—
চতুর্থত খাওয়ার পর বিশ্রাম না করা এবং অপর্যাপ্ত ঘুম—
একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখনিও এই যে-
একবারে দুঃখী, দুই বাড়ে সুখী এবং তিনবারে এ রোগী।
অর্থাৎ একবার মলত্যগ করলে আপনি দুঃখী দুবার ত্যাগ করলে আপনি সুখী এবং তিনবার মানে ই আপনি রোগী। রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস পানি এবং সকালে উঠে দুই গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস করুন তাতে আপনার পরিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি পাবে।
ত্রিফলা অর্থাৎ (আমলকি ,হরতকি, বহেড়া) রাতে ভিজিয়ে রেখে প্রাতে ঈষদুষ্ণ গরম জল সহ সেবন করুন।
ঈষৎ উষ্ণ গরম জল লেবু সহ পান করতে পারেন।
কোষ্ঠ পরিষ্কারকরাই হল আপনার সমস্যার একমাত্র সমাধান ।
ধন্যবাদ