বিজ্ঞাপনের জগতে সবচেয়ে সহজ, সস্তা এবং দ্রুত উপায়ে আপনার পণ্যর বিজ্ঞাপন ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর সবচেয়ে কার্যকারি পদ্ধতি হল ইমেইল মার্কেটিং। আপনি কি বিক্রি করছেন সেটা কোন বিষয় নয়। এক ক্লিকেই আপনার সার্ভিসটি সম্ভাব্য হাজার হাজার গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন।
- কেন করবেন ইমেইল মার্কেটিং?
মানুষ অফিসে থাকুক, বাসায় থাকুক অথবা ভ্রমণরত অবস্থায় থাকুক সে মেইল পড়তে পারে। সুতরাং আপনার বার্তাটি খুব সহজেই পাঠাতে পারবেন আপনার গ্রাহকদের কাছে। কিছু পরিসংখান দেখলেই আমরা বুঝতে পারবো কেন আমরা ইমেইল মার্কেটিংকে এত গুরুপ্ত দিব।
১. সোশ্যাল মিডিয়ার মাদ্ধমে যেখানে মানুষ ০.৫৯% পন্য কিনেছে সেখানে ইমেইল মার্কেটিং এর মাদ্ধমে কিনেছে ৪.২৪%।
২. ফেইসবুক বা টুইটারের চেয়ে নতুন গ্রাহকদের জন্য ইমেইল মার্কেটিং ৪০ গুণ বেশি কার্যকর।
৩. ৭২% মানুষ প্রমোশনাল অফার গুলো ইমেইলে পেতে পছন্দ করে, যেখানে সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষের বিজ্ঞাপন পছন্দের হার মাত্র ১৭%।
৪. একটি টুইটার ক্যাম্পেইনের থেকে একটি ইমেইল ক্যাম্পেইনে ৬ গুণ বেশী ক্লিক পড়ে।
৫. রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট ৪১% (প্রতি ১ ডলার ব্যয়ে)
Adestra পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় ৮৫% কোম্পানি বলে ২০১৯ সালের মধ্য তারা সম্পুর্নরুপে ইমেইল মার্কেটং নির্ভর হয়ে যেতে পারে বলে আশা করা যায়। ৮৯% মার্কেটার মনে করে ব্যবসার জন্য গ্রাহক পাবার প্রাথমিক উপায় হল ইমেইল মার্কেটিং। ৭৬% কাস্টমার বলে যে তারা ইমেইলে পাওয়া তথ্য বা অফারের মাদ্ধমে কেনাকাটা করেন। আর পশ্চিমা বিশ্বের ৯৭% ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহক পায় ইমেইল মার্কেটিং থেকে।
Radicati.com এর এক রিপোর্টে বলা হয় ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তে ইমেইল ব্যাবহারকারির স্যংখা প্রায় ৩.৭ বিলিয়ন, যারা প্রতিদিন প্রায় ২৬৯ বিলিয়ন মেইল সেন্ড করে। একজন মার্কেটার মাত্রই জানেন এটা কত বড় মার্কেট। তাই আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান ইমেইল মার্কেটিং শেখাটা হবে অত্যন্ত বুদ্ধিমানের কাজ।
- কিভাবে করবেন ইমেইল মার্কেটিং?
ইমেইল মার্কেটিং করার জন্য প্রথমেই আপনার লাগবে মেইল লিস্ট। তো কাজটি আপনি করতে পারেন গ্রাহকদের মেইল কিনে ( এখান থেকে ইমেইল লিস্ট কিনতে পারেন ) অথবা নিজেই আপনার সার্ভিস নিতে আগ্রহী এমন গ্রাহকের মেইল সংগ্রহ করতে পারেন। নিচের ধারাবাহিক পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনিও পারেন ইমেইল মার্কেটিং করতে।
১. আপনার লক্ষ্য ঠিক করুন
প্রথমেই ঠিক করুন আপনি কি করতে চান? আপনি কি আপনার পণ্যর বিক্রি বাড়াতে চান? আপনার ব্রান্ড সম্পর্কে মানুষকে জানাতে চান? নাকি আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর আনতে চান?
২. ইমেইল মার্কেটিং প্রভাইডার নির্বাচন করুন
আপনি কোন ইমেইল ক্লায়েন্ট থেকে হাজার হাজার মেইল পাঠাতে পারবেন না। তাই আপনাকে কোন ইমেইল মার্কেটিং প্রভাইডারের সাহায্য নিতে হবে। Mailchimp, AWeber, Getresponse এগুলোর সাহায্য নিতে পারেন।
৩. শুরু করুন লিস্ট বিল্ডিং
লিস্ট বিল্ডের সময় নিচের বিষয় গুলো খেয়াল রাখুন
- গ্রাহককে বলুন মেইলটি দিলে সে কি সুবিধা পাবে।
- আপনি তাকে স্প্যাম করবেন না।
- আপনি কতবার তাকে মেইল পাঠাবেন।
- আপনি তাকে কি কি ডিস্কাউন্ট দিবেন।
- তার মেইলটি আপনার কাছে নিরাপদ।
৪. ইমেইল সাবজেক্ট এবং টেম্পলেট
মেইলে আর্কষনীয় সাবজেক্ট দিন। প্রয়োজন হলে ২০ মিনিট সময় নিন সাবজেক্ট লিখতে এবং রিসার্চ করুন গ্রাহক আসলেই কি ধরনের অফার নিতে চায়। কারন গ্রাহক দুই সেকেন্ডেই সিদ্ধান্ত নিবে সে আপনার মেইলটি খুলবে কি খুলবে না। একটি ভাল টেম্পলেট বাছাই করুন এবং সেখানে আপনার অফার সম্পর্কে কিছু তথ্য দিন।
৫. কতবার মেইল পাঠাতে চান তা নির্বাচন করুন
আপনি কি প্রতিদিন , সাপ্তাহিক নাকি মাসে একবার মেইল পাঠাতে চান তা নির্বাচন করুন।
৬. পর্যবেক্ষন করুন
এই ধাপেই আপনার আসল কাজগুলো কারতে হবে। এখানে দেখতে হবে আপনার মেইলের সাবজেক্ট ঠিক আছে কিনা, মেইল পাঠানোর টাইমিং, ছবি অথবা ছবি ছাড়া মেইল, মেইল কি ইনবক্সে ধুকছে নাকি স্প্যামে যাচ্ছে। এখান থেকেই বুঝতে পারবেন আপনার গ্রাহকরা মেইল কি ফ্রিকোয়েন্সিতে পেতে চাচ্ছে। কি কি ভুল হচ্ছে সেগুলো সংশোধন করুন।
৭. মেইল কালেকশন চালু রাখুন
মার্কেটিং একটি চলমান প্রক্রিয়া তাই আপনাকে পুরাতন গ্রাহকের সাথে সাথে নতুন গ্রাহকের দিকেও মনযোগ দিতে হবে। তাই ল্যান্ডিং পেজ, সার্ভে টুল, পপ আপ প্লাগিন, ফেসবুক ইত্যাদি মাধ্যম ব্যবহার করে মেইল সংগ্রহ করুন।
সর্বপরি একজন ভাল ইমেইল মার্কেটার হতে গেলে আপনাকে লক্ষ লক্ষ ইমেইল সংগ্রহ না করলেও চলবে এবং হাজার হাজার মার্কেটিং স্ট্রাটেজি না জানলেও চলবে। আপনাকে আপনার জন্য সঠিক স্ট্রাটেজি এবং সঠিক মেইল গুলো বাছাই করতে হবে। আর ইমেইল মার্কেটিংয়ের মত এত বিস্তারিত বিষয় একটি আর্টিকেলে লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। ধন্যবাদ সবাইকে সময় নিয়ে পোষ্টটি পড়ার জন্য। সামনে দেখা হবে নতুন কনো বিষয় নিয়ে। তত দিন ভাল থাকুন।